বেশিরভাগ মায়েরাই বলেন তাদের বাচ্চা খাবার নিয়ে হরহামেশাই ঝামেলা করে। খাবার ঠিকমত খেতে চায় না। জেনে নিন বাচ্চাদের খাবারের অরুচির কারণ এবং আপনার করণীয়।
ঠিকমতো না খাওয়ার কারণে
অনেক বাচ্চাদের স্বাস্থ্যগত অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এমনকি সঠিক
শারীরিক বিকাশ ঘটতেও বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ সময় বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন না তাদের বাচ্চাকে কিভাবে খাবারে আগ্রহী করবেন।
চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের
খাবারে অরুচি হওয়ার কয়েকটি কারণ সম্পর্কে।
বাচ্চাদের খাবারে অরুচি
পাঁচটি কারণ:
১. শারীরিক অসুস্থতাঃ বাচ্চাদের শারীরিক কোনো অসুবিধা থাকলে, সে কারণেও বাচ্চার খাবারে অরুচি তৈরি হতে পারে। যেমনঃ
বাচ্চার শরীরে যথাযথ পুষ্টির অভাব, আয়রন এবং জিংক এর
অভাবজনিত সমস্যা, কৃমির সংক্রমণ ইত্যাদি। সাধারণত এসব
শারীরিক সমস্যা থাকলে বাচ্চারা ঠিকমতো খেতে চায় না।
২. বাড়তি খাবারে
অভ্যস্ত না হওয়াঃ সাধারণত
বাচ্চারা জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ থেকেই সকল পুষ্টি পেয়ে
থাকে। এরপর বাড়তি খাবার দেওয়া শুরু করা হলে অনেক সময় বাচ্চারা নতুন খাবারে অভ্যস্ত
হতে সময় নেয়। তখন বাচ্চারা সহজে খেতে চায় না।
৩. খাবারে একঘেয়েমিঃ বাচ্চাদেরকে একই খাবার প্রতিদিন দেওয়া হলে সে খাবার
তাদের একঘেয়েমি চলে আসে। ধরুন আপনি হয়তো বাচ্চাকে প্রতিদিন সুজিই খেতে দিচ্ছেন
অথবা খিচুড়ি একটানা কয়েকদিন ধরে
খাওয়াচ্ছেন। তখন তারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
আর খেতে চায় না।
৪. জোরপূর্বক খাবার
খাওয়ানোঃ বাচ্চাদেরকে খাবার-দাবার
জোর করে খাওয়ালে তাদের কাছে তখন খাবার খাওয়াটা খুবই বিরক্তিকর মনে হয়। অনেক সময়
দেখা যায় তাদের পেটে ক্ষুধা নেই কিন্তু তারপরও তাদের খাওয়ানো হচ্ছে। এমন হলে
বাচ্চাদের দ্রুত খাবারে অরুচি চলে আসে।
৫. বেশি পরিমাণে জাঙ্ক
ফুড দেওয়াঃ বাচ্চারা সাধারণত
বাইরের খাবার বেশি পছন্দ করে বিশেষ করে জাঙ্ক ফুড। দেখা গেল সারাদিন চিপ্স, চকলেট, আইসক্রিম খেয়েই বাচ্চার পেট ভরে আছে। তখন বাচ্চাকে খাওয়াতে গেলে তারা খেতে চায় না না। এছাড়াও এসব খাবার
বাচ্চাদের অরুচির অন্যতম একটি কারণ।
করণীয়:
·
বাচ্চাদের
শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে তার জন্য একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং সেই
অনুযায়ী চিকিৎসা করান। কারণ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে বাচ্চাদের সহজে খাবারে রুচি আসবে না।
·
বাচ্চাদের
বাড়তি খাবার দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে খাবারটা নরম এবং সহজপাচ্য হয়। কারণ
বাচ্চারা খাবার সহজে গিলতে এবং হজম করতে না পারলে তারা সে খাবার খেতে চাইবে না।
·
বাচ্চাদের
প্রতিদিনের খাবারে কিছুটা ভিন্নতা রাখুন। এক খাবার প্রতিদিন খেয়ে তাদের যাতে
একঘেয়ে হয়ে চলে না আসে। বাচ্চাদের খাবার দেওয়ার সময় কিছুটা ডেকোরেশন করে দিতে
পারেন যাতে তারা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
·
বাচ্চাদের
কে কখনই খাবার নিয়ে জোর করতে যাবেন না। বুঝার চেষ্টা করুন বাচ্চার কখন ক্ষুদা
লেগেছে। মনে রাখবেন বাচ্চাদের খাবারের চাহিদা একেক দিন একেক রকম থাকে। প্রতিদিন
একই পরিমানের খাবার জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না।
·
বাচ্চাদেরকে
আলাদা না খাইয়ে পরিবারের সবার সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
এতে বাচ্চা বাকি সবাইকে খেতে দেখে নিজেও খাবার প্রতি আগ্রহী হবে।
·
বাচ্চাদেরকে
বাহিরের খাবার সীমিত পরিমাণে দিবেন। দিনে একবার একটা চিপস অথবা একটা চকলেটের বেশি
দেওয়া উচিত নয়।
·
বাচ্চাদেরকে
নিজে হাতে নিয়ে খেতে দিন এবং তাদের পছন্দ কে বেশি গুরুত্ব দিন। খাবার-দাবারে
স্বাধীনতা থাকলে বাচ্চারা নিজে থেকেই খেতে চাইবে।
পরিশেষে মনে রাখতে হবে বাচ্চাদেরকে খাবার খাওয়ানোর সময় আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। কারণ একদিনে হয়তোবা বাচ্চার মুখের অরুচি চলে যাবে না। তাই ধীরে ধীরে সময় নিয়ে চেষ্টা করতে হবে তাদেরকে খাবারে আগ্রহী করতে।